স্টাফ রিপোর্টার: কালীগঞ্জে বিএনপি নেতার হুকুমে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল গাফফারকে মারধর করে নগদ অর্থ, মোবাইল, ল্যাপটপ ও ক্যামেরা লুট করার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্তরা সবাই বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক কালীগঞ্জের জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের কাউলিতা এলাকার মো. ওয়াসিন শিকদারের ছেলে আব্দুল গাফফার (৪৫)। তিনি যুগান্তর পত্রিকার কালীগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। সে এখনো গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের কাউলিতা এলাকার মৃত কাদির আকন্দের ছেলে আলমগীর হোসেন ওরফে বগা আলমগীর (৪৭), সিরাজ উদ্দিন সেরুর ছেলে শাহেদ আলী আকন্দ (৩৫) ও হৃদয় আকন্দ (২৫), ফালু আকন্দ (২৬), মোমেন আকন্দের ছেলে মারুফ (২৫), ফজলুল হক আকন্দ ওরফে তারকাঁটা ফজলু (৬০), সিরাজ উদ্দিন সেরু (৫৬), কালীগঞ্জ পৌরসভার মুনশেফপুরের মৃত কবুলের ছেলে রুবেল (২২) এবং কুলথুন এলাকার বিল্লাল খানের ছেলে ফয়সাল (৩৭)।
আসামীদের মধ্যে হুকুমদাতা ফজলুল হক আকন্দ ওরফে তারকাঁটা ফজলু কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক, প্রধান আসামী আলমগীর হোসেন জাঙ্গালিয়া ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এবং সিরাজ উদ্দিন সেরু ওয়ার্ড বিএনপি নেতা। অন্যরা সবাই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থক।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্তরা মাদক, চুরি, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। এর আগে তাদের অপকর্ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তারা সাংবাদিক গাফফারের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। সম্প্রতি তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন তৈরির জন্য তথ্য সংগ্রহ করছিল আবদুল গাফফার। বিষয়টি বুঝতে পেরে অভিযুক্তরা তাকে হুমকি দিতে থাকে।
গত রবিবার (১৬ মার্চ) রাত ৯টার দিকে সাংবাদিক আব্দুল গাফফার আনন্দ টিভির সাংবাদিক খোরশেদ আলম খানের মোটর সাইকেলে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আওড়াখালি বাজার চৌরাস্তার এলাকায় গোবিন্দ রেস্টুরেন্টের সামনে পৌঁছলে অভিযুক্তরা মোটরসাইকেলের অবৈধভাবে পথরোধ করে। পরে ধাক্কা দিয়ে গাফফারকে মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দেয়। সেই সময় ফজলুল হক আকন্দের হুকুমে অন্যরা তাকে মারধর করতে থাকে। এ সময় তারা গাফফারের সঙ্গে থাকা গরু কেনার নগদ ২ লাখ ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা, দুটি মোবাইল, একটি ল্যাপটপ ও একটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। এসময়ে ডাক চিৎকারে স্থানীয় আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে আসামীরা সাংবাদিককে হত্যার হুমকি দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় সাংবাদিক আব্দুল গাফফার বাদী হয়ে ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। থানা পুলিশ দোষীদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে। কিন্তু সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে অভিযূক্তদের বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নি। যার ফলে জনজনে বিএনপি নেতা কর্মীদের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কালীগঞ্জ থানা এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এঘটনায় গাজীপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে দোষী বিএনপির নেতা কর্মীদের শাস্তি দাবি করেছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কালীগঞ্জ থানার এসআই রিগ্যান মোল্লা বলেন, ঘটনায় পর রাতেই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত ফয়সালকে গ্রেফতার করা হয়। পরের দিন তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপরাপর পলাতক আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এবিষয়ে জানতে গাজীপুর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ফজলুল হক মিলনের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও উনি ফোন রিসিভ করে নি।