হাসমত :
পুঠিয়ার পালোপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সহকারি শিক্ষক মো: মনিরুজ্জামান মনির ও তার ভাই আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে ছাগল চড়ানোকে কেন্দ্র করে মো: ফরিদ ইসলামের স্ত্রী আক্তারুল বেগম ও বেল্লাল হোসেনের স্ত্রী রিনা বেগমকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাসা বাড়ির ভেতর ঢুকে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে পুঠিয়া উপজেলার পালোপাড়া গ্রামের তাহেরের মোড় এলাকায় ।
গত ৯ মার্চ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে আশরাফুল ইসলামের মা মোছাঃ আকতারুন (৩৫) তাদের পালিত ছাগল চড়াতে গেলে মনিরুজ্জামান ও আনিসুর রহমানের মা সুফিয়া বেগম (৬০) তাকে গালিগালাজ করেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে সেখান থেকে আশরাফুলের মা ছাগল নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন।
ওই দিন বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মনিরুজ্জামান ও আনিসুর রহমান বাঁশের লাঠি ও কাঠের বাটাম নিয়ে মোটরসাইকেলে করে আশরাফুল ইসলামের বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা আশরাফুলের মাকে লক্ষ্য করে বাঁশের লাঠি দিয়ে হামলা চালায়। এ সময় মনিরুজ্জামানের লাঠির আঘাতে আশরাফুলের মায়ের কপাল, মুখমণ্ডল ও নাক ফেটে রক্তাক্ত হয়ে পড়েন। এদিকে আনিসুর রহমান ডাব গাছের ডাল দিয়ে আশরাফুলের মা আক্তারুল বেগমকে এলোপাতাড়িভাবে মারধর করতে থাকে। এতে আশরাফুলের মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তজমাট নীলাফুলা জখম হয়।
আশরাফুলের মাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে তার চাচী রিনা বেগম (৪০) ও চাচা মোঃ বেল্লালকেও একইভাবে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় আহতরা ডাক চিৎকার করতে থাকলে প্রতিবেশীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। এতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে সহকারী শিক্ষক ও তার ভাই মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক আশরাফুলের মাকে ভর্তি করে চিকিৎসা দিয়েছেন । এছাড়া চাচা ও চাচীকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী আক্তারুল বেগম জান রক্তাক্ত জখম করার অভিযোগে সুষ্ঠ তদন্ত করে ন্যায় বিচার তরান্বিত করার জন্য দাবি জানান।
স্থানীয় বাসিন্দা ডেজি বেগম জানান, এ ধরনের হামলার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। শিক্ষকতা পেশাটি সম্মানের হওয়া স্বত্বেও এমন জঘন্যতম কর্মকাণ্ডের শিক্ষকতা পেশাটি কলংকিত করেছে।
শিক্ষকরা দেশ গড়ার কারিগর সেই শিক্ষক যদি অনধিকারভাবে জোরপূর্বক কারো বসত বাড়িতে প্রবেশ করে অসহায় নারীদের এইভাবে অতর্কিত হামলা করে, তবে তার কাছে পড়তে যাওয়া কোমলমতি শিশুরা বিভিন্ন অপরাধ জনক কর্মকাণ্ড করার শিক্ষা পাবে বলে ধারণা স্থানীয়দের।
সুশীল সমাজের সচেতন নাগরিকরা বলছেন, পালো পাড়া সরকারি প্রাইমারি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান ও তার ভাইয়ের হামলার ঘটনায় দুই নারী রক্তাক্ত হওয়ার ঘটনা সমাজের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও নিন্দনীয়। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, বিশেষ করে যখন এটি নারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়। সুশীল সমাজ হিসেবে আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার দাবি করছি।
শিক্ষক হিসেবে মনিরুজ্জামানের এমন আচরণ অত্যন্ত লজ্জাজনক। একজন শিক্ষকের উচিত ছিল মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতা প্রদর্শন করা, কিন্তু এই অভিযোগে উনার পেশাগত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে জেলার শিক্ষা অফিসারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সুশীল মহল। এবিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ে এই বিষয়ে তদন্ত করে ন্যায়বিচার করার দাবি স্থানীয়দের।
নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধে সমাজের সকল স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। আমরা সকলকে নারী অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। এই ধরনের ঘটনা যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, তা নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন ও স্থানীয় সম্প্রদায়কে একযোগে কাজ করতে হবে।
সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে আমরা আহত নারীদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি এবং তাদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি, এই ঘটনা সমাজে ন্যায়বিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হয়ে থাকবে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের ছেলে আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে পুঠিয়া থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
ঘটনার বিষয় তদন্ত করতে আসা এসআই মো : আমিরুল ইসলাম জানান, ঘটনার সত্যতা পেয়েছি এ বিষয়ে আমি ওসি স্যারকে জানিয়েছি।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "মামলাটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি এবং দোষীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সম্পাদক ও প্রকাশক : হাসান জাকির
নির্বাহী সম্পাদক : মোঃ আনোয়ার হোসেন
০১৭১৫০৩১৬৫৫
অফিস- চান্দনা চৌরাস্তা, আমান্তা টাওয়ার, বাসন থানা, গাজীপুর।