ঢাকাSunday , 16 March 2025
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

নরসিংদীতে মাদক বিক্রিতে নেমেছেন বিচারক ও পুলিশ!

admin
March 16, 2025 6:17 am
Link Copied!

নিজস্ব প্রতিবেদক:

নরসিংদীতে মাদক বিক্রি শুরু করেছেন বিচারক ও পুলিশ। আদালতের মালখানা থেকে ৯৬ কেজি গাঁজা বিক্রি করে দেয়ার নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সাথে পুলিশের দুই পরিদর্শক এবং এক জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। এমন চাঞ্চ্যলকর ঘটনা ঘটেছে নরসিংদী জেলায়। অভিযুক্তরা হলেন নরসিংদী কোর্ট পরিদর্শক খন্দকার জাকির হোসেন ও নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পরিদর্শক এস এম কামরুজ্জামান এবং চিফ জুডিশিয়াল আদালতের এক জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট। এ খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে ১৫ মার্চ শনিবার সকালে তাৎক্ষনিক দুই পরিদর্শককে নরসিংদী পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করার আদেশ দেন নরসিংদীর পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান। অপর আরেক আদেশে পরিদর্শক মো: আবুল কায়েস আকন্দকে নরসিংদী গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক এবং মো: সাইরুল ইসলামকে সদর কোর্টের পরিদর্শক হিসেবে বদলির আদেশ দেন।

এরপরই জেলাব্যাপী শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা। এ ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই দুপুরে দিকে পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি একেএম আওলাদ হোসেন আরেক আদেশে অভিযুক্ত দুই পরিদর্শককে ঢাকায় বদলির আদেশ দেন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে পুলিশের এমন রদবদলের পর নড়েচড়ে বসে জেলার পুরো পুলিশ প্রশাসন।

এদিকে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও চিফ জুডিশিয়াল আদালতের নথি ঘেঁটে জানা যায়, গত ০৫ ফেব্রুয়ারি নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার সৃষ্টিগড় থেকে ৬ বস্তা গাঁজা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। প্রতি বস্তায় ১৬ কেজি করে ৬ বস্তায় মোট ৯৬ কেজি গাঁজা ছিলো। পরবর্তীতে বিপুল পরিমাণ এই গাঁজা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে আনা হয়। গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় থেকে কাগজে কলমে আদালতে পাঠানো হয়েছে মর্মে দেখানো হয়। প্রকৃতপক্ষে বিপুল পরিমাণ এই মালামাল আদালতের মালখানায় নেয়া হয়নি। আদালতে নেয়ার আগেই পুলিশ ও বিচারকরা মিলে এই মাদকদ্রব্য বিক্রি করে টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে নেন। মাদক বিক্রি করার দুই দিন পর কাগজে কলমে গত ১১ মার্চ এ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার এক প্রমানপত্র তৈরী করা হয়।

তবে মালখানায় বিপুল পরিমাণ এত মাদক দ্রব্য আছে কি নাই তার কোন খোঁজ রাখেননি চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ লুৎফল মজিদ নয়ন। মালখানা যাচাই বাছাই না করেই তিনি জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের উপস্থিতিতে এ মাদকদ্রব্য ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকও সহজেই কাগজে কলমে এ মাদক ধ্বংস দেখিয়ে দেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ লুৎফল মজিদ নয়নের কাছে বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য জুডিশিয়াল ম্যজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমনটি আর কখনও হবে না। এ যাত্রায় তাকে ক্ষমা করে দেয়ার আকুতি জানান।

পুলিশ ও আদালতের একটি সুত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরেই নরসিংদীর আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশ ও বিচারক মিলে এ অবস্থা চালু করেছেন । আগে প্রকাশ্যে মাদকদ্রব্য পুড়ানো হলেও এখন আর তা করা হয় না।

এদিকে মালখানার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর শামীম এক প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে। প্রতিবেদনে তিনি জানান, গত ১১ মার্চ কোন মাদকদ্রব্য ধ্বংস করতে দেখেননি তিনি। ডিবির ওসি কামরুজ্জামান বার বার তাকে ডিবি অফিসে এনে কিছু টাকা নেয়ার চাপ দেন । টাকা নিতে না চাইলে তিনি তাকে হুমকি ধমকি দেন। কাগজে কলমে সব ঠিক রাখলেও এখানে বিশাল অনিয়ম হওয়ার কথা স্বীকার করে পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, গত দুই মাসে আদালত প্রাঙ্গনে কোন মাদকদ্রব্য পোড়াতে দেখেননি তিনি।

এসব বিষয়ে ডিবির সদ্য বিদায়ী ওসি কামরুজ্জামান বলেন, ডিবির ওসিসহ সকল ওসি যা কিছু করেন সব এসপির নির্দেশেই করেন। আমাদেরকে দিয়ে তিনি ডাকাতি করান। ওনার বিরুদ্ধে মামলাও হবে। আমরা হুকুমের গোলাম। তিনি প্রত্যেকদিন আমাদের কাছে ক্ষুদে মেসেজ পাঠায় ‘টু লাখ টুমুরো’। ৪/৫ দিন আগে আমাকে ব্যাংকের একাউন্ট নম্বর দিয়ে ২ লাখ টাকা পাঠাতে বলেন। পরে আমি সরি বললে তার চক্ষুশূল হয়ে যাই। এ ঘটনার পরই তিনি আমার বিরুদ্ধে লেগে যান। গত শুক্রবারও বেলাবো থানায় গাঁজার বিশাল চালান ধরা পরে। পরে এসপির কাছে বলে তা গায়েব করে দেয়।

পুলিশের আরেক পরিদর্শক জানান, ৯৬ কেজি গাঁজা সাড়ে ৯ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে। মাদক বিক্রির এ টাকা থেকে সাড়ে ৩ লাখ পেয়েছে বিচারক আর ৬ লাখ টাকা পেয়েছে পুলিশ। মাধবদীর কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী মায়ার কাছে এ গাঁজা বিক্রি করা হয়। তবে বিক্রিত গাঁজার মধ্যে ৪৫ কেজি গাঁজা মায়ার কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকী গাঁজা ডিবির ওসি কামরুজ্জামানের হেফাজতেই রয়েছে। আদালতের মালখানায় কোনো মাল প্রেরণ করা হয়নি।

অপরদিকে সদ্য বিদায়ী কোট পরিদর্শক জাকির হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।
মাদকদ্রব্য উদ্ধার করে এনে এ কায়দায় বিক্রি করার কারণেই জেলা থেকে মাদক নির্মূল করা যাচ্ছে না বলে মত প্রকাশ করেছেন বিশিষ্টজনরা। এতে করে জেলা জুড়ে বাড়ছে মাদক সেবী ও মাদক বিক্রেতাদের সংখ্যা। বাড়ছে নানা অপরাধ ও খুনোখুনির ঘটনা।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নানের কাছে জানতে চাইলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: কলিমুল্লাহকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনুসন্ধানপুর্বক তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিদেন দাখিল করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।