ঢাকাSaturday , 18 October 2025
  1. অন্যান্য
  2. অর্থনীতি
  3. আইন বিচার
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ক্যাম্পাস
  6. খেলাধুলা
  7. গণমাধ্যম
  8. জনপ্রিয় সংবাদ
  9. জাতীয়
  10. বিনোদন
  11. রাজধানী
  12. রাজনীতি
  13. সারাদেশ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

ভুয়া ওষুধ কোম্পানীর সন্ধান মিললো গৌরীপুরে

Link Copied!

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ- কৃষক ও খামারীদের সর্বনাশা প্রাণিসম্পদ বিভাগে দেশজুড়ে আলোচিত সেই ভুয়া কোম্পানীর ওষুধ সন্ধান মিললো ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। এ কোম্পানীর ওষুধে উপজেলার শত শত গরু-ছাগল মারা যাওয়া, রোগাক্রান্ত পশু আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ায় চিকিৎসকদের সন্দেহের তীর ছিলো সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সলিড ফার্মাকেয়ার’ কোম্পানীর প্রতি। এ কোম্পানীর উৎপাদিত ভেজাল ও নকল ওষুধের প্যাকেটের গায়ে লেখা ছিলো বিশ্ববিখ্যাত ওষুধ কোম্পানী ‘ভিরব্যাক অ্যানিমেল হেলথ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ এবং এ কোম্পানীর লগো।

এ প্রসঙ্গে এ কোম্পানীর মালিক মোজাব্বির হোসেন খান জানান, তার আমদানী ও সরবরাহের লাইসেন্স আছে। তবে কোনো ওষুধ উৎপাদনের অনুমোদন তার নেই। তিনি অবৈধভাবেই এ কোম্পানীতে ওষুধ উৎপাদন করছিলেন।
বুধবার এ কোম্পানীর ওষুধে মারা যায় উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের ভূটিয়ারকোনা গ্রামে সিংন্দীশাইয়াল জাতের ৩লাখ টাকা মূল্যের একটি গাভী। গাভীর মালিক রফিকুল ইসলাম হাবুলের ছেলে মো. খান জাহান জানান, গরু অসুস্থ্য হওয়ার পর পশু ডাক্তার আব্দুল গফুর চিকিৎসা দেন। তিনি সলিড ফার্মাকেয়ার কোম্পানীর সলিড জায়েন ওষুধ লিখে দেন। সেই ওষুধ খাওয়ার পর আরো অসুস্থ্য হয়ে পরে। খবর পেয়ে ছুটে যান উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন। তিনি জানান, গাভীটি ফুডফয়েজিং হয়েছিলো। এ কোম্পানীর ওষুধ খাওয়ার পর আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ওষুধের বোতলের গায়ে লিখা কোম্পানীটি ঢাকার। পরবর্তীতে জানা যায়, গুগলে চার্জ দিয়ে এ কোম্পানীটি গৌরীপুরে। সেই কোম্পানীটিকে ধরতে গোপন সূত্রের মাধ্যমে ঠিকানা পৌর শহরের মাস্টারপাড়ায় চিহ্নিত করা হয়। এ নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠক করে অভিযানের সিদ্ধান্ত হয়।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) গৌরীপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমার নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অভিযানে থাকা সকলেই বিস্মৃত হন। বিশাল কোম্পানীর সাইনবোর্ড, দেশজুড়ে লোভনীয় অফার, চকচকে বোতল, ওষুধের কৌটার লেভেলের কোটি বোতলের স্টিকার, হাজার হাজার বোতল, লক্ষ লক্ষ টাকার অনুমোদনহীন ক্যামিকেল, রাসায়নিক দ্রব্য, কন্টিনারসহ নানা উপকরণ। যেনো একটি জঙ্গলে ভিতরে-ভাঙা স্যাতস্যাতে আজব এক ওষুধ কোম্পানী। শুধুমাত্র পোল্ট্রি ও পশু খাদ্য উপকরণ, মেডিসিন আমদানী ও সরবরাহকারী লাইসেন্স নিয়ে নিজেই পুরো কোম্পানীর মালিক সেজে গেছেন মোজাব্বির হোসেন খান। তিনি উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের মুখুরিয়া গ্রামের মো. নূরুল হুদার পুত্র। কোম্পানীতে নেই পশু-খাদ্য বিশেষজ্ঞ, মেডিকেল টিম, ওষুধ বিশেষজ্ঞ, টেকনিশিয়ান এবং ড্রাগ কোম্পানীর উৎপাদনের কোনো লাইসেন্স খোঁজে পাওয়া যায়নি। তারপরেও সেখানে গবাদি পশুর জীবনরক্ষা নামে ধ্বংসকারী ২১টি জাতের ওষুধ উৎপাদন হচ্ছে।

অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে আরো তথ্য, গৌরীপুরের মাস্টারপাড়ায় উৎপাদিত ওষুধের প্যাকেটে আন্তর্জাতিকমানের ভারতের ‘ভিরব্যাক অ্যানিমেল হেলথ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ এর লগো ও ঠিকানা ব্যবহার করে ম্যানুফ্যাচারিং কোম্পানী হিসাবে লেখা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত পশুচিকিৎসক পিয়ের-রিচার্ড ডিক ১৯৬৮সনে এ কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করেন। তাদের উদ্ভাবিত ওষুধ বিশ্বের ১০০টিও বেশি দেশে প্রাণীর রোগের চিকিৎসা ও প্রাণীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবহার করা হচ্ছে। সেই কোম্পানীর ভারতের মুম্বাই মহারাষ্ট্রের ম্যাগাথানে ডিপোর বিপরীতে বোরিভালি পূর্ব ওয়েস্টার্ন এক্সপ্রেস হাইওয়ে ৬০৪, ৬ষ্ঠ তলার ঠিকানা ব্যবহার করে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ‘ভিরব্যাক অ্যানিমেল হেলথ ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড’ লেখা হচ্ছে ওষুধের প্রত্যেকটি প্যাকেট ও বোতলে।

এছাড়াও প্যাকেটের গায়ে ৩৫০টাকা লিখা ওষুধ এ কোম্পানী মাত্র ৫০টাকা বিক্রি করছে। ১১০০টাকা মূল্যের ক্যালসিয়াম দোকানীরা পাচ্ছেন মাত্র ১৫০টাকায়। ১৫শ টাকা মূল্যের গোখাদ্যের ভিটামিন মাত্র ৩শ টাকা ওষুধের দোকানদার কিনে নিচ্ছেন। প্রত্যেকটি ওষুধ বিক্রিতে কেনার চেয়ে লাভ ৮ থেকে ১০গুণ। এতো লাভ পাওয়ায় দেশের নানা প্রান্তের ওষুধ ব্যবসায়ীরা হুমকি খেয়ে পড়েন ‘সলিড ফার্মাকেয়ার’ এ ওষুধে দিকে। এ ওষুধে গরু-ছাগলের মৃত্যু বাড়লেও বিক্রি অধিক লাভবান হওয়ায় দোকানে দোকানে সয়লাব হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর কোনাপাড়া গ্রামের আল আমিন জানায়, এ কোম্পানীর ওষুধ খাওয়ানোর কারণে এক মাস পর্যন্ত দুধ বিক্রি করতে পারি নাই। দুধ জমে নষ্ট হয়ে যায়। দোকানে গেলেই এ কোম্পানীর ওষুধ দেয়। বায়ড়াউড়া গ্রামের হেলাল উদ্দিন জানান, গিয়েছিলাম গরু ভালো করতে, এ কোম্পানীর ওষুধ খেয়ে গরু আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ডৌহাখলা ইউনিয়নের তাঁতকুড়া গ্রামের ফজলুল হক জানান, গত সেপ্টেম্বর মাসে এ কোম্পানীর ওষুধ নিয়েছিলাম। গরুর কোনো কাজে আসে নাই। এছাড়াও পৌর শহরের মাস্টারপাড়া এলাকায় এ ভেজাল কোম্পানী পরিচালনা করলেও ভ্রাম্যমান আদালতে প্রদর্শন করা হয় অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্স। গত ২৮ আগস্ট তারিখে ১৭২নং ক্রমিকে দেয়া ২৭২নং লাইসেন্সটিতেও এ ইউনিয়নের পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমানের স্বাক্ষর নেই। এ প্রসঙ্গে মোজাব্বির হোসেন খান জানান, অচিন্তপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের সাইনিং পাওয়ার নেই, কে চেয়ারম্যান সেটাও আমি জানি না। ওষুধের বোতলে ঢাকা-বাংলাদেশ লেখা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আসলে আগে ঢাকায় থাকতাম, তাই ঢাকা লিখে দিয়েছি।

এ বিষয়ে গৌরীপুর প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মুহাম্মদ শিহাব উদ্দিন জানান, সারাদেশে এ কোম্পানীর ওষুধে সয়লাব। বিশেষ করে সিলেট, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জে ব্যাপকভাবে এ ওষুধ বিক্রি হচ্ছে। সেই তুলনায় গৌরীপুরে এ ওষুধ বিক্রি কম। তবে গতকাল বুধবার এ কোম্পানীর ওষুধ খেয়ে মাওহা ইউনিয়নে ৩লাখ টাকার একটি গাভী মারা যায়। তারপরে ওষুধ বোতল খুলে দেখি ওষুধ বিবর্ণ, কালচে। ওষুধের গায়ে লেখা ঢাকা, বাংলাদেশ। গুগলে চার্জ দিয়ে দেখি, এটা গৌরীপুরে। তারপরে জানা যায়, এটা কোনো ওষুধ উৎপাদন কোম্পানীর অনুমোদন নেই। এখন এসে দেখি, সারাদেশে যে ২১টি ওষুধ বিক্রি করা হচ্ছে, তা সম্পূর্ণভাবে অনুমোদনবিহীন।