স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ময়মনসিংহ সিভিল সার্জন অফিসের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মোঃ জাকির হোসেনকে নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শূন্য পদে বদলী করার পর যোগদান না করে প্রায় ১ মাস যাবত অনুপস্থিত রয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর খালিয়াজুরী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আরেফিন আজিম যোগদান না করায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করেছেন।
বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের কাছ থেকে নতুন লাইসেন্স ও নবায়নের নামে সিভিল সার্জনসহ ডিজি অফিসের এক পরিচালকের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা আদায় করার অভিযোগসহ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তাকে বদলী করা হয়।
জানা যায়, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরঈশ্বরদিয়া এলাকার মৃত হাছেন আলী মন্ডলের ছেলে মো: জাকির হোসেন। ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ সালে স্বাস্থ্য বিভাগের অধিনে সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউরা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ২৪ আগস্ট ৯৭ সালে অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে নিয়ম বর্হিভূতভাবে পদন্নতি পেয়ে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যোগদান করেন। এ সময় তিনি বিভিন্ন ঘটনায় ভর্তিকৃত হতাহতদের বিষয়ে ভূয়া ও জাল সনদ (জখমি সার্টিফিকেট) সরবরাহ করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। এসব ঘটনায় ঢাকার সিআইডি রেশন স্টোরের এসআই শাহাদাৎ হোসেন ও নেত্রকোনা জেলা সিআইডি ময়মনসিংহের কতোয়ালী মডেল থানায় পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। ২০১৪ সালে জাকির হোসেন জেলা সিভিল সার্জন অফিসে একই পদে যোগদান করার পর ময়মনসিংহ সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারী হাসপাতাল ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকরা তার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। মালিকদের কাছ থেকে লাইসেন্স নবায়ন ও নতুন লাইসেন্স করে দেয়ার কথা বলে সিভিল সার্জন ও ডিজির এক পরিচালকের নাম ভাঙিয়ে মোটা অঙ্কের অনৈতিক সুবিধা নিয়েও কাজ না করার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোন কথা বলতে পারেন না। তার রয়েছে নিজস্ব বাহিনী। অদৃশ্য শক্তি বলে যা ইচ্ছে তাই করে যাচ্ছেন। বিশাল আকারের মাছের খামার, বহুতল ভবনসহ নামে বেনামে বর্তমানে কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক তিনি। গত ২০১৪-১৫ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রনালয়ের কর্মচারী নিয়োগ বিধি বহির্ভূতভাবে মোঃ জারিক হোসেন অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদোন্নতি প্রদান হয়েছে। একারণে স্থানীয় ও রাজস্ব অডিট অধিদপ্তর অডিট এন্ড একাউন্টস অফিসার মোঃ রফিকুল ইসলাম ২০১৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জাকিরকে পূর্বের পদে বহাল ও অতিরিক্ত টাকা ফেরত দেয়ার নিদের্শ প্রদান করেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা আজও বাস্তবায়িত হয়নি।
এসংক্রান্তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য প্রাপ্তির লক্ষ্যে আবেদন করলে গত ১৪ অক্টোবর স্বাঃঅধিঃ/এমআইএস/তথ্য কমিশন/২০২৫/৪৯৮ নং স্মারকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য প্রধানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রেজাউল হক ময়মনসিংহ সিভিল সার্জনকে তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদককে তথ্য প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেন।
এবিষয়ে জানতে ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ফয়সাল আহমেদের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে উনি জানান, বিধি মোতাবেক তথ্য প্রদান করা হবে। জাকিরের বিরুদ্ধে বিভাগীয় বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
এবিষয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে উনি জানান, সিকিউরিটি গার্ড পদ থেকে কাম কম্পিউটার পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। উনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের বিষয়ে উনি জানান, উনি চাকরি থেকে অব্যাহতি নিতে পারেন। যোগদান না করা উনার ব্যক্তিগত বিষয়। এবিষয়ে তথ্য প্রদানে অপারগতা প্রকাশ করেন।

